,

দ্রুত গতিতে চালায় গাড়ি, এক হাতে মোবাইল :: অন্য হাতে করে ড্রাইভিং :: নবীগঞ্জে শিশু-কিশোরদের হাতে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা

কিবরিয়া চৌধুরী ও জাবেদ তালুদার : নবীগঞ্জ পৌর শহরের অলিগলিতে অগণিত ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চলাচল করছে। আর এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালকদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। এসব অদক্ষ চালকদের অনেকেরই প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা না থাকায় যাত্রীদের সাথে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, অদক্ষ এইসব চালকেরা রাস্তায় অতি দ্রুত গতিতে থাকা অবস্থায় একহাতে মোবাইল ফোনে কথা বলছে অন্য হাতে অটোরিক্সা চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।
এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালানো শিশু-কিশোরদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন জায়গার ভাড়া নির্ধারণ করা থ্াকলেও অটোরিক্সা চালকরা ইচ্ছে মতো বেপরোয়া চলাচল ও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইসতিয়াক নামে এক ছাত্র জানান পূর্ব তিমিরপুর থেকে নবীগঞ্জ শহওে রিক্সাভাড়া ১০ টাকা, শহরের ভেতরে গেলে ১০-১৫ টাকা দিতে হয় কিন্ত এক চালক আমাকে শহরের বাংলা টাউনে নামিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা ভাড়া আদায় করতে বাধ্য করে। বদরুল নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান- নবীগঞ্জের ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার ব্যাবস্থাপনা যে সম্পূর্ণ হ-যব-র-ল সেটা বুঝতে আপনাকে পন্ডিত হবে না। শহর থেকে উপজেলা পর্যন্ত ভাড়া ১০ টাকা কিন্তু এক ড্রাইভার আমার কাছ থেকে গাজির টেক পয়েন্ট থেকে উপজেলা পর্যন্ত ৭০ টাকা ভাড়া দাবী করে। এছাড়া ১০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ২০/৩০ টাকা আদায় তো রয়েছেই। যাত্রীরা চালকদের কথা মতো ভাড়া না দিলে অনেক চালক যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অটোরিক্সা চালকরা নবীগঞ্জ শহরের বিভিন্ন রাস্তার মাথায় এবং বাজারের অলি-গলিতে এলোমেলো ভাবে অটোরিকশা ফেলে রাখে। ফলে অন্য যানবাহন ও পথচারীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এসব ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা বেড়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে শহরে। অটোরিকশার নেই কোনো নির্ধারিত স্ট্যান্ড। যাত্রীদের অভিযোগ, ছোট ছোট শিশু কিশোররা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালানোর ক্ষেত্রে রাস্তার এপাশ-ওপাশ, ডান-বাম, সাইট কিছুই বুঝে না। তবুও তারা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালক।
অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলা জুড়ে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার গতি নিয়ন্ত্রণে অমতা, চালকদের অনভিজ্ঞতা এবং ওভারটেক প্রবণতার কারণে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা দুর্ঘটনা ঘটছে যত্রতত্র। এদিকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নবীগঞ্জ বাসী। দিন নেই রাত নেই, যখন তখন লোডশেডিং কেড়ে নিচ্ছে কর্ম চাঞ্চল্য। বিদ্যুৎ যতোটুকু জুটছে, ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা তার একটি বড় অংশ কেড়ে নিচ্ছে। মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো অনুমোদনহীন ভাবে নবীগঞ্জে দাপিয়ে বাড়ছে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা। দিনকে দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অনভিজ্ঞ এসব রিকশা চালকের বেশিরভাগেরই দ্রুতগতি সম্পন্ন ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালানোর কোনো প্রশিক্ষণ নেই। হতদরিদ্র মানুষগুলোর বেশীরভাগই সহজ পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চলাচলে নেমে যাচ্ছে। প্যাডেল রিকশা চালানো কষ্টসাধ্য বলেই তারা দ্রুতগতির ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার দিকেই বেশী ঝুঁকছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের আয়ের উৎস হিসেবে এ সকল ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চলতে দেয়া হলেও বর্তমানে তা ব্যবহার করছে সকলে। এ যান চালানো সহজ হওয়ায় অনেক সুস্থ মানুষ প্যাডেল চালিত রিক্সা ছেড়ে বেছে নিচ্ছে এ ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা। অনেক যাত্রী সময় বাঁচাতে বা সাশ্রয়ী হওয়ায় ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ব্যবহারে আগ্রহী হয়, আবার অনেকে এ ধরনের রিক্সার বেপরোয়া গতি দেখে অনিচ্ছাও প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ পৌর এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেকে ব্যবসায়ীক ফায়দা হাসিলে এসব শিশু কিশোরদের হাতে ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা তোলে দিয়েছেন। শিশু কিশোরেরা শহরে কর্তাদের নাকের ডগায় ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি শিশু কিশোরদের ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালনায় বন্ধ করতে প্রশাসনের পদক্ষেপ কামনা করছেন।
নবীগঞ্জ পৌর অফিস থেকেও এসব শিশু-কিশোরদের অটোরিক্সা চালাতে কোনো লাইসেন্স প্রদান করা হয় না বলে মেয়র আলহাজ্ব ছাবির আহমদ জানান, এছাড়াও ১৮ বছরের নিচে কেউ অটোরিক্সা চালালে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি জানান যোগদান করার পরেই সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। শীগ্রই শ্রমিক নেতাদের নিয়ে আলোচনা এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সচেতন মহলের দাবি সর্বত্র লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছোট ছোট বাচ্চারা অগণিত ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা চালাচ্ছেন। প্রশাসনের কঠোর নজরদারী না থাকায়, অথবা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার মালিকদের কাছ থেকে আড়াইশ থেকে ৩’শ টাকা বাড়ায় এসব শিশু কিশোর চালকরা ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা পেয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এতে দিন দিন জঞ্জাল বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, অচিরেই স্থানীয় যেকোন প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে বিধি মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নাগালে চলে আসবে।


     এই বিভাগের আরো খবর